চিকেন বিরিয়ানি রেসিপি

 চিকেন বিরিয়ানি রেসিপি

বিরিয়ানি হলো একটি ঐতিহ্যবাহী দক্ষিণ এশিয়ার খাবার, যা সুগন্ধি মশলা, মাংস, চাল, এবং বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে তৈরি করা হয়। বিরিয়ানির নানা ধরনের বৈচিত্র্য থাকলেও, চিকেন বিরিয়ানি খুবই জনপ্রিয় এবং মুখরোচক। এটি কোনো বিশেষ উপলক্ষে, পারিবারিক অনুষ্ঠানে বা কোনো উৎসবে পরিবেশন করা হয়। আজ আমরা জানব একটি ক্লাসিক চিকেন বিরিয়ানি রেসিপি, যা সহজেই বাড়িতে তৈরি করা যায়।

উপকরণ:
মুরগির মেরিনেশনের জন্য:
মুরগির টুকরা (মাঝারি আকারের): ১ কেজি
দই: ১ কাপ
আদা-রসুন বাটা: ২ টেবিল চামচ
লাল মরিচ গুঁড়ো: ১ টেবিল চামচ
হলুদ গুঁড়ো: ১/২ চা চামচ
ধনে গুঁড়ো: ১ টেবিল চামচ
গরম মশলা গুঁড়ো: ১ চা চামচ
লেবুর রস: ২ টেবিল চামচ
লবণ: স্বাদ অনুযায়ী
তেল: ২ টেবিল চামচ
চাল রান্নার জন্য:
বাসমতী চাল: ২ কাপ (২০ মিনিট ভিজিয়ে রাখা)
পানি: ৬ কাপ
তেজপাতা: ২ টি
দারুচিনি স্টিক: ১ টুকরো
এলাচ: ৪-৫ টি
লবণ: স্বাদ অনুযায়ী
তেল: ১ টেবিল চামচ
বিরিয়ানি রান্নার জন্য:
পেঁয়াজ: ৩ টি (স্লাইস করা)
টমেটো: ২ টি (স্লাইস করা)
কাঁচা মরিচ: ৪-৫ টি (চিরে নিন)
পুদিনা পাতা: ১ কাপ (কুচি করা)
ধনিয়া পাতা: ১ কাপ (কুচি করা)
জাফরান: ১/২ চা চামচ (১/৪ কাপ গরম দুধে ভিজিয়ে রাখা)
ঘি: ২ টেবিল চামচ
কাজু: ১/৪ কাপ
কিশমিশ: ২ টেবিল চামচ
দুধ: ১/২ কাপ (বিরিয়ানি স্তরে দেওয়ার জন্য)
প্রস্তুতির ধাপ:
১. মুরগির মেরিনেশন:
প্রথমে মুরগির টুকরোগুলোকে একটি বড় মিক্সিং বাউলে নিন। মুরগির উপর দই, আদা-রসুন বাটা, লাল মরিচ গুঁড়ো, হলুদ গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো, গরম মশলা গুঁড়ো, লেবুর রস, লবণ এবং তেল দিয়ে ভালো করে মেখে নিন। মুরগির টুকরাগুলোকে পুরোপুরি মশলার সাথে মিশিয়ে অন্তত ১-২ ঘণ্টার জন্য মেরিনেট করতে রেখে দিন। যদি সময় থাকে, তাহলে সারা রাত মেরিনেট করলে আরও ভালো হয়।

২. চাল রান্না:
একটি বড় হাঁড়িতে ৬ কাপ পানি গরম করুন। তাতে তেজপাতা, দারুচিনি স্টিক, এলাচ এবং লবণ দিন। পানি ফুটতে শুরু করলে ভিজিয়ে রাখা বাসমতী চাল ঢেলে দিন। চাল ৭০-৮০% সিদ্ধ হয়ে এলে, চাল থেকে পানি ঝরিয়ে নিন এবং আলাদা করে রাখুন। মনে রাখবেন, চাল পুরোপুরি সিদ্ধ হবে না, কারণ বিরিয়ানি রান্নার সময় আরও রান্না হবে।

৩. মুরগি রান্না:
একটি বড় প্যানে ২ টেবিল চামচ তেল বা ঘি গরম করুন। এতে স্লাইস করা পেঁয়াজ ভেজে সোনালী করে তুলুন। এর মধ্যে মেরিনেট করা মুরগি দিয়ে মাঝারি আঁচে রান্না করুন। মুরগি হালকা বাদামি হয়ে আসলে টমেটো, কাঁচা মরিচ এবং সামান্য লবণ যোগ করুন। মুরগি রান্না হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন, তবে মুরগির মধ্যে কিছুটা ঝোল থাকবে যাতে বিরিয়ানি রান্নার সময় মশলাগুলো ভালোভাবে মিশে যায়। মুরগি সিদ্ধ হয়ে গেলে গ্যাস বন্ধ করে দিন।

৪. বিরিয়ানি স্তর তৈরি:
একটি গভীর এবং ভারি তলার হাঁড়ি নিন। হাঁড়ির তলায় প্রথমে রান্না করা মুরগি মশলার একটি স্তর দিন। এর উপর আধা সিদ্ধ চালের একটি স্তর ছড়িয়ে দিন। এর উপর কুচি করা পুদিনা পাতা, ধনিয়া পাতা, ভাজা পেঁয়াজ, কাজু, কিশমিশ, এবং জাফরান দুধ ছিটিয়ে দিন। এইভাবে মুরগি এবং চালের স্তর পর পর দিতে থাকুন।

৫. দমে রান্না:
হাঁড়ির ঢাকনা ভালোভাবে বন্ধ করে দিন, যাতে বাষ্প বাইরে না বের হয়। ঢাকনাটি সিল করার জন্য আটা মাখিয়ে ঢাকনার চারপাশে লাগিয়ে দিতে পারেন। এটি গরম তাওয়া বা চুলার উপর অল্প আঁচে ৩০-৪০ মিনিটের জন্য দমে রাখতে হবে। যদি আপনার ওভেন থাকে, তাহলে ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ৩০ মিনিট বেক করতে পারেন।

৬. পরিবেশন:
চিকেন বিরিয়ানি রান্না হয়ে গেলে, গ্যাস বন্ধ করে বিরিয়ানিকে ১০ মিনিটের জন্য দমে রাখতে দিন। তারপর হাঁড়ির ঢাকনা খুলে বিরিয়ানির অপূর্ব সুগন্ধ উপভোগ করুন। হালকা হাতে চাল ও মুরগি মিশিয়ে পরিবেশন করুন। সস, রায়তা বা স্যালাডের সাথে গরম গরম চিকেন বিরিয়ানি পরিবেশন করুন।

কিছু টিপস:
ভালো মানের বাসমতী চাল ব্যবহার করলে বিরিয়ানির স্বাদ ও মান দুটোই ভালো হবে।
মেরিনেশনের সময় যত বেশি হবে, ততই মুরগির মধ্যে মশলার স্বাদ ভালোভাবে মিশবে।
বিরিয়ানি দমে রাখার সময় তাপমাত্রা খুব বেশি না রাখাই ভালো, কারণ এতে চাল ও মুরগি ভালোভাবে রান্না হবে এবং পুড়ে যাবে না।
জাফরান ব্যবহারে বিরিয়ানির রঙ ও স্বাদ আরও সুন্দর হয়। তবে এটি না থাকলে কেওড়া জল বা গোলাপ জলও ব্যবহার করা যায়।
চিকেন বিরিয়ানি একটি অত্যন্ত সুস্বাদু ও সমৃদ্ধ খাবার, যা খেতে সবাই ভালোবাসে। এই রেসিপিটি অনুসরণ করে আপনি সহজেই বাড়িতে একটি মজাদার চিকেন বিরিয়ানি তৈরি করতে পারেন। এই রেসিপিটি আপনার পরিবারের সকলের মন জয় করবে এবং যে কোনো উৎসবের সময় এটি একটি বিশেষ খাবার হিসেবে পরিবেশন করতে পারবেন।

শেষ কথা: চিকেন বিরিয়ানি রান্নার সময় ধৈর্য ও যত্নের প্রয়োজন হয়, এবং এর প্রতিটি স্তরে ভালো মানের উপকরণ ব্যবহার করতে হবে। বিরিয়ানির স্বাদ ও গন্ধ শুধু মশলার উপরই নয়, আপনার ভালোবাসা ও যত্নের উপরও নির্ভর করে। তাই বিরিয়ানি তৈরি করার সময় নিজের মনকে শান্ত রাখুন, আর মনে রাখুন যে, রান্না করা একটি শিল্প এবং আপনি সেই শিল্পী, যিনি খাবারের মাধ্যমে অন্যদের আনন্দ ও তৃপ্তি দিতে পারেন।

আনন্দের সাথে রান্না করুন, আর পরবর্তীতে সবাইকে মুগ্ধ করুন!